আন্তর্জাতিক ডেস্ক: করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে আরোপিত লকডাউনের বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকারি বাসভবন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে আয়োজিত বেশ কয়েকটি পার্টি নিয়ে তদন্তে নেমেছে যুক্তরাজ্যের পুলিশ। মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) ব্রিটেনের মেট্রোপলিটন পুলিশ একথা জানায় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ক্রেসিডা ডিক জানিয়েছেন, গত দুই বছরে ডাউনিং স্ট্রিট ও হোয়াইট হলে কোভিড-১৯ বিধির সম্ভাব্য লঙ্ঘনের কয়েকটি ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার লন্ডন অ্যাসেম্বলির লোকাল অথরিটিকে তিনি একথা জানান।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে কোভিড-১৯ বিধিনিষেধ ভেঙে মদপার্টির আয়োজন নিয়ে এমনিতেই বিতর্কের মধ্যে আছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। বেশে জোরেশোরে উঠেছে তার পদত্যাগের দাবিও। সর্বশেষ জনসনের বিরুদ্ধে লকডাউনের মধ্যে নিজের জন্মদিনের পার্টি করারও অভিযোগ ওঠে। আর এবার এসব পার্টি নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করায় অনেকটা চাপের মুখেই পড়লেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
করোনা মহামারির কারণে আরোপ করা লকডাউনের মধ্যে আয়োজিত পার্টির যে দু’টি ঘটনা নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে সেটি ২০২০ সালের মে ও জুন মাসের। যুক্তরাজ্যজুড়ে সেসময় লকডাউন চলছে। সংক্রমণ রুখতে জনসমাবেশ ও পার্টিসহ সবকিছুর ওপরই সেসময় নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। সেই বছর ২০ মে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ৪০ জনকে নিয়ে গার্ডেন পার্টি করেছিলেন বরিস জনসন।
পার্টিতে অংশ নিতে ই-মেইলের মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানানো হয় অতিথিদের। সেই ই-মেইলে ‘ব্রিং ইয়োর ওন অ্যালকোহল’ (নিজের মদ নিজে আনো) উল্লেখ করে গার্ডেন পার্টির আয়োজন করেছিলেন জনসন। অবশ্য করোনা সংক্রমণ রুখতে ব্রিটিশ সরকারের নিয়ম অনুযায়ী সে সময় সর্বোচ্চ মাত্র দু’জন বাড়িতে মিলিত হতে পারতেন। বার, রেস্তোরাঁ সব বন্ধ। আর সেই সময়েই কি না জনসন এই পার্টি করেন।
এরপর ২০২০ সালের জুন মাসে জনসন জন্মদিনের পার্টি করেন। সেখানে ৩০ জন আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই জনসনের জন্মদিনের হ্যাপি বার্থডে গানে সুর মেলান এবং পরে তাদের সবাইকে কেক পরিবেশন করা হয়। ব্রিটেনের আইটিভি জনসনের এই জন্মদিন পার্টির খবর ফাঁস বলেছে, জন্মদিনের এই পার্টি যখন আয়োজন করা হয়েছিল জনসন তখনও ক্যারি সাইমন্ডসকে বিয়ে করেননি। ক্যারিই ২০২০ সালের ১৯ জুন জনসনের ৫৬তম জন্মদিনের পার্টির আয়োজন করেন। ৩০ জন কর্মী সেই পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন।
আইটিভি এই পার্টির খবর প্রকাশ্যে আনার পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দফতর সেটি স্বীকারও করে নিয়েছে। ডাউনিং স্ট্রিট জানিয়েছে, একটা বৈঠকের পর কর্মীরা সামান্য সময়ের জন্য সমবেত হয়েছিলেন। জনসন সেখানে দশ মিনিটের মতো উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া ব্রিটিশ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্বামী প্রিন্স ফিলিপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আগেও ডাউনিং স্ট্রিটের কর্মীরা দু’টি পৃথক পার্টি করেছিলেন। তবে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জনসনের দাবি ছিল, লকডাউনের মধ্যে পার্টির আয়োজন নিয়ে কেউ তাকে সতর্ক করেনি।
মঙ্গলবার অ্যাসেম্বলির পুলিশ এন্ড ক্রাইম কমিটিকে কমিশনার ক্রেসিডা ডিক জানান, ‘চলমান তদন্ত সম্পর্কে আমরা ধারাবাহিক মন্তব্য করব না। তবে আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি যে, আমরা উল্লেখযোগ্য পয়েন্টগুলোর আপডেট দেবো যা আমরা সাধারণত করে থাকি।’
তিনি আরও বলেন, সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা স্যু গ্রে অভিযোগগুলো নিয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত করেন এবং এরপরই সেটি পুলশের কাছে স্থানান্তর করেন।